অবশ্যই সর্বদা মনে রাখুন...

আপনার সঠিক পদক্ষেপই সাপে কাটলে (সর্প দংশন) হতে জীবন বাঁচাতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ৭০% সাপ নির্বিষ বা হালকা বিষধর - যা মানুষের জন্য প্রাণঘাতী নয়; অন্যদিকে বিষধর সাপের ২৪.২% ক্ষেত্রে সেটা বিষক্রিয়া ঘটে - বাকি প্রায় ৭৫% ক্ষেত্রে ড্রাইবাইট (বিষ ইনজেক্ট করেনি এমন দংশন হয়) যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না। অনন্যতর যে অল্প সংখ্যক সময়ে সাপের দংশনে বিষক্রিয়া ঘটে তাতে প্যানিক হওয়া (হার্ট এট্যাক), ভুল চিকিৎসা, সময় ক্ষেপন এবং সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্যই অধিকাংশ মৃত্যু ঘটে - সুতরাং আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সাপে দংশন মানেই মৃত্যু নয় - আপনার সচেতনতায় সঠিক চিকিৎসায় সুস্থতার সম্ভাবনা প্রবল। সাপে দংশনের প্রথম ৩০ মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — শান্ত থাকুন ও নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন...

সাপের কামড় বুঝবেন কিভাবে

  • সাধারণত দুইটি দাগ থাকবে (fang marks)।
  • ক্ষতের চারপাশ ফুলে যেতে পারে, ব্যথা হতে পারে।
  • বিষাক্ত কামড়ে শ্বাস নিতে কষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা, চোখ ঝাপসা হওয়া, বমি, হাত-পা অবশ, রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • অবিষাক্ত কামড়ে শুধু ক্ষত ও ব্যথা থাকে, কিন্তু সিস্টেমিক উপসর্গ থাকে না।

সাপের প্রকারভেদ ও লক্ষণ

সাপের নামবিষের ধরনমূল লক্ষণ
কোবরা / গোখরাস্নায়ুবিষ (Neurotoxic)চোখ ঝাপসা, শ্বাস কষ্ট, দেহ অবশ
ক্রেট (Krait)স্নায়ুবিষঘুম ঘুম ভাব, পক্ষাঘাত
রাসেল ভাইপাররক্তবিষ (Haemotoxic)রক্তপাত, ফোলা, মাথা ঘোরা
স-স্কেল্ড ভাইপাররক্তবিষক্ষত ফোলা, ব্যথা, রক্ত জমাট সমস্যা
কিং কোবরাস্নায়ুবিষ + হৃৎপিণ্ড বিষশ্বাস বন্ধ, দ্রুত মৃত্যু ঝুঁকি

যা করবেন না

  • ক্ষত কেটে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।
  • ক্ষত চুষবেন না — এতে বিষ মুখে ঢুকে বিপদ বাড়ে।
  • ক্ষতে বরফ, কেমিক্যাল, হারবাল কিছু লাগাবেন না।
  • অতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ বা দড়ি দিয়ে রক্ত বন্ধ করবেন না।
  • রোগীকে দৌড়াতে বা হাঁটতে দেবেন না।
  • অ্যালকোহল, দুধ, বা ঘরোয়া ওষুধ দেবেন না।

যা করবেন (First Aid)

  • রোগীকে স্থির রাখুন, ভয় কমান, নড়াচড়া কমান।
  • কামড়ের স্থানটি হৃদপিণ্ডের নিচে রাখুন।
  • ঢিলেঢালা পোশাক, আংটি বা বেল্ট খুলে দিন।
  • হালকা চাপযুক্ত ব্যান্ডেজ দিন (রক্ত বন্ধ নয়)।
  • রোগীকে শুইয়ে রাখুন, কথা বলায় সীমাবদ্ধতা দিন।
  • সরাসরি হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর করণীয়

  • চিকিৎসককে বলুন — “সাপে কামড়েছে”।
  • কামড়ের সময় ও উপসর্গ উল্লেখ করুন।
  • ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা, শ্বাসপ্রশ্বাস পরীক্ষা করবেন।
  • বিষের ধরন অনুযায়ী Antivenom প্রয়োগ করা হবে।
  • টিটেনাস ইনজেকশন ও সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।

অ্যান্টিভেনম কোথায় পাওয়া যায়

হাসপাতালঅবস্থান
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঢাকা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালচট্টগ্রাম
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালরাজশাহী
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালখুলনা
সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসিলেট
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালময়মনসিংহ
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালবরিশাল
দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালদিনাজপুর
কক্সবাজার সদর হাসপাতালকক্সবাজার

জরুরি নম্বর

  • জাতীয় জরুরি সেবা: 999
  • DGHS হেল্পলাইন: 16263

৯. শিশু ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে

সাপের বিষ ছোট শরীরে দ্রুত ছড়ায়। শিশু, গর্ভবতী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিতে হবে। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য।

ফলো-আপ কেয়ার

  • হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিশ্রাম নিন।
  • ক্ষতের যত্ন নিন — পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
  • শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা, ব্যথা, জ্বর বা দুর্বলতা দেখা দিলে পুনরায় ডাক্তার দেখান।